কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার ১৬ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এবারের টাকার পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহরের রাখুয়াইল এলাকার প্রাচীন এ মসজিদের আটটি দানবাক্স (লোহার সিন্দুক) খুললে টাকাগুলো পাওয়া যায়। এছাড়াও এ সময় পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্যলঙ্কারসহ অনেক বৈদেশিক মুদ্রা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা গণনা কার্যক্রম শুরু হবে। গণনা শেষে বলা যাবে এসব দানবাক্সে কী পরিমাণ টাকা ও মূল্যবানসামগ্রী দানে পাওয়া গেছে।
এর আগে সর্বশেষ ১২ মার্চ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছিল। এবার ৩ মাস ২০ দিন পর দান সিন্দুকগুলো খোলা হলো।
পাগলা মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, দানের টাকা মসজিদ কমপ্লেক্সের উন্নয়নসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা ও এতিমখানার উন্নয়নের পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী এবং দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত অসহায়দের কল্যাণে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।
মানুষের ধারণা, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এজন্য দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে মানতের টাকা সোনা, রুপার গহনা দান করে থাকেন। অন্য ধর্মের মানুষেরাও এখানে দান করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আর এই ধারাবাহিকতা চলছে আড়াই শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। অনেক বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিংবদন্তি আছে মসজিদটি গায়েবিভাবে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও।
দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়েই কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে আরো ব্যাপক উন্নয়নকাজ। মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতেও অর্থ সাহায্য করা হয়।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীশ আলম এর আগে নয়া দিগন্তকে বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুক খুলে টাকা গণনা শুরু হয়।